BANGLA DATE TODAY
English
   

বাংলা পঞ্জিকার ১২ মাসের নাম ও বিশদ বিবরণ

বাংলা পঞ্জিকা চন্দ্রসৌর পদ্ধতির ভিত্তিতে নির্ধারিত। বাংলা সনের ১২ মাস ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত এবং প্রতিটি মাসের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব।

বাংলা সনের ১২ মাসের নাম

  1. বৈশাখ
  2. জ্যৈষ্ঠ
  3. আষাঢ়
  4. শ্রাবণ
  5. ভাদ্র
  6. আশ্বিন
  7. কার্তিক
  8. অগ্রহায়ণ
  9. পৌষ
  10. মাঘ
  11. ফাল্গুন
  12. চৈত্র

নিচে প্রতিটি মাসের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

  1. বৈশাখ

  2. বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম মাস, যা বাঙালি সংস্কৃতিতে এক বিশেষ মর্যাদা ধারণ করে। এই মাসের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ হিসেবে উদযাপিত হয়। এটি বাংলা নববর্ষ, যেখানে বাঙালিরা নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। পহেলা বৈশাখের দিনে মঙ্গল শোভাযাত্রা, হালখাতা খোলা, এবং পান্তা-ইলিশ খাওয়ার রীতি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী উৎসবের অংশ। বৈশাখের প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের উষ্ণতা এবং কালবৈশাখী ঝড় দেখা যায়, যা বাংলার গ্রাম-শহরের পরিবেশকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে।

  3. জ্যৈষ্ঠ

  4. বৈশাখের পরবর্তী মাস হলো জ্যৈষ্ঠ, যা গ্রীষ্মের দ্বিতীয় মাস হিসেবে পরিচিত। এই মাসে প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি আমসহ অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন ফলের মৌসুম শুরু হয়। এই মাসকে ‘মধুমাস’ও বলা হয়, কারণ আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি ফল এই সময়ে প্রাচুর্যে পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠের ঝড়ঝাপটা এবং বৈশাখী ঝড় বাংলার প্রকৃতির বৈচিত্র্য প্রকাশ করে।

  5. আষাঢ়

  6. আষাঢ় মাস বাংলা বর্ষার প্রথম মাস। প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কৃষিকাজের মৌসুম শুরু হয়। এই মাসে ধানের চারা রোপণ এবং অন্যান্য ফসলের জন্য মাটি প্রস্তুতির কাজ করা হয়। বৃষ্টির ধারায় ভেজা প্রকৃতি এবং বাংলার নদী-নালায় পানি বেড়ে যাওয়ার সময় এটি। আষাঢ়ের বৃষ্টি বাংলার প্রকৃতিকে শীতল করে তোলে এবং কৃষকেরা বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে ফসল ফলায়।

  7. শ্রাবণ

  8. শ্রাবণ মাস বর্ষার দ্বিতীয় মাস। এই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে এবং পরিবেশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শ্রাবণ মাসে নদী-নালা ভরে ওঠে এবং বাংলাদেশের নানান অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা যায়। শ্রাবণ মাসে বাঙালিরা বিভিন্ন উৎসব ও আচার পালন করে, যার মধ্যে রয়েছে রথযাত্রা।

  9. ভাদ্র

  10. ভাদ্র মাস শস্যের ক্ষেত্র পূর্ণ হওয়ার মাস। সাধারণত বর্ষার শেষে আসা ভাদ্র মাসে মাঠের শস্য পরিপক্ক হয়ে ওঠে। এই সময়ে কৃষিকাজ ধীরে ধীরে শেষ হয় এবং ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়। ভাদ্র মাসে গ্রামাঞ্চলে নবান্ন উৎসব পালিত হয়, যেখানে নতুন ফসল দিয়ে নানা ধরনের খাবার তৈরি করা হয়।

  11. আশ্বিন

  12. আশ্বিন মাস হলো শরতের শুরু। নীল আকাশ, সাদা কাশফুল, এবং বাতাসে হালকা শীতলতা আশ্বিন মাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই মাসে দুর্গাপূজার উৎসব পালিত হয়, যা বাঙালির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলার প্রতিটি অঞ্চলে আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করা হয়।

  13. কার্তিক

  14. কার্তিক মাসে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যায়। এই মাসটি কৃষিকাজের প্রধান সময় হিসেবে পরিচিত, যেখানে ফসল কাটা হয়। কার্তিক মাসে কার্তিক পূর্ণিমা, ধানের মৌসুম, এবং মাছ ধরার উৎসবের সাথে সম্পর্কিত অনুষ্ঠান পালিত হয়। এটি বাঙালির আদি ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে রক্ষিত।

  15. অগ্রহায়ণ

  16. অগ্রহায়ণ মাস নতুন ধান ঘরে তোলার মাস। এই মাসে কৃষকেরা নবান্ন উৎসব পালন করে, যেখানে নতুন ধান থেকে পিঠা, পায়েস ইত্যাদি তৈরি করা হয়। অগ্রহায়ণ মাসকে বাংলার কৃষিজীবী মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে গণ্য করা হয়, কারণ এই সময়ে ফসল তোলার পর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে।

  17. পৌষ

  18. পৌষ মাস শীতের মাঝামাঝি সময়। এই সময়ে বাংলার গ্রামীণ জীবনে কৃষিকাজের ধীরগতি থাকে। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে মেলা এবং নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শীতের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পরিবেশে মানুষ ঘরে বসে নানা ধরনের খাবার তৈরি করে এবং উষ্ণতার খোঁজে থাকে।

  19. মাঘ

  20. মাঘ মাস শীতের শেষ মাস হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে প্রচণ্ড শীত অনুভূত হয়। মাঘী পূর্ণিমা এবং সার্বভৌম মাঘী স্নানের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই সময়ে পালিত হয়। মাঘ মাসে বাংলার প্রকৃতিতে শীতের শীতলতা পরিলক্ষিত হয় এবং পরিবেশ শুষ্ক ও ঠাণ্ডা হয়ে ওঠে।

  21. ফাল্গুন

  22. ফাল্গুন মাস বসন্তের প্রথম মাস। এই মাসে প্রকৃতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটে এবং চারপাশের পরিবেশ রঙিন হয়ে ওঠে। ফাল্গুনের প্রধান উৎসব হলো ‘বসন্ত উৎসব’, যেখানে বাঙালিরা পীতবস্ত্র পরিধান করে বসন্তের আগমন উদযাপন করে। এই সময়ে ফুল ফুটে, পাখির কূজন শোনা যায়, এবং প্রকৃতিতে নতুন গাছের কচিপাতা দেখা যায়।

  23. চৈত্র

  24. চৈত্র মাস হলো বাংলা বছরের শেষ মাস। এই সময়ে গ্রীষ্মের আগমন ঘটে এবং তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। চৈত্র মাসের শেষ দিনে ‘চৈত্র সংক্রান্তি’ পালিত হয়, যা পুরোনো বছরকে বিদায় জানানোর এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রতীক। বাংলার গ্রামীণ সমাজে চৈত্র মাসে নানা ধরনের উৎসব এবং মেলা আয়োজন করা হয়।

বাংলা পঞ্জিকার বৈশিষ্ট্য

বাংলা পঞ্জিকা মূলত চন্দ্র ও সৌর পদ্ধতির সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে। প্রতিটি মাসের নিজস্ব ঋতুর পরিবর্তন এবং উৎসব রয়েছে, যা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই পঞ্জিকা কৃষিনির্ভর সমাজের প্রয়োজন অনুসারে তৈরি করা হয়েছে এবং আজও বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।